“ত্র্যম্বকায় ত্রিনেত্রায় ত্রিশূলবর ধারিনে
কন্দর্পায় সুতাশায় নমো বৈ পরমাত্মনে”
পুরাকালে একদিন মহামুনি ‘সূত’র আশ্রমে কয়েকজন ঋষি, মুনি, তপস্বী, উপস্থিত হলে মহামুনি ‘সূত’ তাঁদের সাদর আপ্যায়ন করেন এবং তাঁদের আসার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। মহামুনি সূত তাঁদের বিনীত স্বরে জিজ্ঞেস করেন “হে মহান ঋষি তপস্বীরা, আমার এ দীন কুঠিরে আপনাদের পদার্পণের কারণ কি জানতে পারি?” মহামুনি সূতোর কথা শুনে ঋষি এবং তপস্বীরা বলেন “মহামুনি সূত, আপি মহাজ্ঞানী, মহাশাস্ত্রজ্ঞ, বিদ্যান। আমরা আপনার কাছে জানতে এসেছি ‘শিবরাত্রির কথা’। এই শিবরাত্রির কথা কাহিনী কি ভাবে শুরু হয়েছিল, তা যদি আমাদের আপনি শোনান, তবে আমরা আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো”। তাঁদের অনুরোধ শুনে সূত মহাতপস্বী অত্যন্ত খুশি হলেন। তাঁদের আসন গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন এবং বলেন “এতো আমার অত্যন্ত সৌভাগ্য কি আপনারা আমার কাছে সেই পরমপুরুষ, সৃষ্টি স্থিতির যিনি আধার, সমস্ত জীব যার পূজা করে, সেই দেবাদিদেব শিবের ‘শিবরাত্রি কাহিনী’ আপনারা আমার মুখ থেকে শুনতে চেয়েছেন। আমার জীবন আজ ধন্য হল। আমি নিশ্চই আপনাদের ইচ্ছা পূরণ করবো। শিবরাত্রি উদযাপন হল এমন এক অনুষ্ঠান যাকে সমস্ত দৈব অনুষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে সর্ববিধ পাপ বিনষ্ট হয় এবং অপরিমেয় পুণ্য লাভ হয়”।
শিবরাত্রি উদযাপন হল এমন এক অনুষ্ঠান যাকে সমস্ত দৈব অনুষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে সর্ববিধ পাপ বিনষ্ট হয় এবং অপরিমেয় পুণ্য লাভ হয়। – মহামুনি সূত
মহামুনি সূত এবার শিবরাত্রির কাহিনী বলতে শুরু করলেন। “ত্রেতাযুগে কোন এক নগরে ‘ভিল্ল’ নামে এক ব্যাধ বাস করতেন। স্বভাবে সে ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং ধৈর্য পরায়ণ। তার কাজ ছিল বনের হরিণ হত্যা করে তার মাংস বিক্রি করা। কখনো কখনো সে অকারণে হরিণ বধ করতো। তার ফলে সে প্রচুর তার জীবনে পাপ জমা করেছিল। সেইদিন ছিল ‘মহাশিবরাত্রি’। সেই ভিল্ল ব্যাধের বাড়িতে কোন খাবারের সংস্থান ছিল না। তার পরিবারের লোকেরা ভিল্ল-কে জানায় আজ ঘরে কোন খাবারের সংস্থান নেই, ভিল্ল শিকার করলে তবেই বাড়িতে খাবারের ব্যবস্থা হবে। তার কথা শুনে ব্যাধ তির ধনুক হাতে নিয়ে জংগলে চলল হরিণ শিকার করতে। সারাদিন সমস্ত জঙ্গল খুজেও সে কোন হরিণের সন্ধান পেলনা। হতাশ মনে জংগলের মধ্যে সে একটা ছোট মতো জলা দেখতে পেলো যেখানে পশুরা জল খেতে আসে। সেই ব্যাধ ভাবলো আমি এইখানে অপেক্ষা করি, কারণ সন্ধ্যের সময় হরিণেরা অবশ্যই এই জলাশয়ে জল খেতে আসবে। তখন আমি তাদের শিকার করবো। এই ভেবে ব্যাধ সেই জলাশয়ের সামনে একটা বেল গাছ দেখে তাতে চড়ে বসলো। গাছে ওঠার সময় যদি তৃষ্ণা পায় ভেবে কিছুটা জল সংগ্রহ করে নিয়ে সেই বেলগাছে চেপে বসলো। দেখতে দেখতে রাত ১ম প্রহর হল। হঠাৎ দেখা গেল একটি হরিণ জল খাবার জন্য সেই জলাশয়ের কাছে এসেছে। সেই হরিণ-কে দেখে ব্যাধ যেমনি হরিণটিকে শিকার করার জন্য তির ধনুক তুলেছে, তখনই তার শরীরের কম্পনে গাছ থেকে কয়েকটা বেলপাতা সেই বেলগাছের নীচে শিবলিঙ্গের মাথায় পড়ে এবং সাথে তার খাবারের জল থেকেও কিছুটা জল শিবলিঙ্গের মাথায় পড়ে। আশুতোষ মহাদেব সেই জল এবং বেলপাতাকে ব্যাধের পূজা বলে গ্রহণ করে অত্যন্ত খুশি হলেন। মহাদেব খুশি হওয়ার ফলে ব্যাধের জন্মকৃত পাপ সাথে সাথে অন্তর্হিত হয়ে গেল। এই সময় হরিণী ব্যাধের বেলগাছে নড়াচড়ার আওয়াজ পেয়ে ব্যাধকে দেখে ভাবল আজ আমার মৃত্যু এই ব্যাধের হাতে নিশ্চিত। এই সময় ব্যাধও হরিণীর দিকে তির নিক্ষেপ করার জন্য তৈরি হলে হরিণী বলে উঠলো “হে ব্যাধ, তুমি আমাকে কেন হত্যা করছো?” ব্যাধ হরিণীর মুখে মানুষের আওয়াজ শুনে অবাক হয়ে বলল “আমার বাড়িতে আমার পরিবার অভুক্ত হয়ে আছে। আমি তোমাকে হত্যা করে তোমার মাংসে তাদের পেট ভরাবো”। ব্যাধের কথা শুনে সেই হরিণী অত্যন্ত খুশি হয়ে বলল “এতো অত্যন্ত আনন্দের কথা, পুণ্যের কথা। আমার মাংসে কিছু মানুষের উপকার হবে, এর চেয়ে বেশী খুশীর কথা আর কি হতে পারে! কিন্তু হে ব্যাধ তুমি আমাকে কিছু সময় দাও। আমি একটু জলপান করে বাড়িতে আমার পরিজনদের সাথে দেখা করে আসি। আমার ঘরে আমার স্বামী, বোন এবং দুই শিশু আছে। তাদের সাথে দেখা করেই আমি তোমার কাছে আসবো। তখন তুমি আমায় হত্যা করে আমার মাংসে তোমার পরিবারের খুদা দূর কোরো”। ব্যাধ এই কথা শুনে হেসে বলে “আমি যদি তোমায় ছেড়ে দিই তবে তুমি আর আমার কাছে আসবে না, তুমি পালিয়ে যাবে”। ব্যাধের কথা শুনে সেই হরিণী বলে “সিন্ধু, জলধারা, বায়ু, দেবগণ যেমন সত্যকে আশ্রয় করে তাদের প্রতিজ্ঞা পালন করেন, আমিও তাই করবো। যদি তা না করি তবে আমার মস্তকে সবসময় পাপ অবস্থান করবে। আমার মস্তকে সেই পাপ অবস্থান করবে যে পাপ কোন নারী তার স্বামীর আদেশ লঙ্ঘন করলে হয়, যে মানুষ পরের উপকার ভুলে গেলে হয়, হরি আরাধনা না করলে যে পাপ হয় আর যারা পরের ক্ষতি করে, সেই সমস্ত পাপ আমার মস্তকে অবস্থান করে আমাকে মহা পাপীতে পরিণত করবে”। হরিণীর কথা শুনে ব্যাধের বিশ্বাস হল যে এই হরিণী আবার তার কাছে ফিরে আসবে। তখন সেই ব্যাধ হরিণীকে বলে “ঠিক আছে তুমি তোমার পরিবারের কাছে যাও, কিন্তু সময় মতো ফিরে এসো”। হরিণী অত্যন্ত আনন্দিত মনে সে ব্যাধকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যায়। হরিণীকে যেতে দিয়ে ব্যাধ আবার বেলগাছে অপেক্ষা করতে থাকে। এই ভাবে ব্যাধের প্রথম প্রহর কাটে। মন থেকে তার হিংসা প্রবৃত্তি চলে গেল হরিণীকে চলে যেতে দিয়ে। যে ব্যাধ হরিণীকে বধ করে তার পরিবারের লোকজনের খুদা মেটাবার চিন্তা করে শিকার করতে এসেছিল, সে মুহূর্তের মধ্যে ভুলে গেল তার হিংসা প্রবৃত্তির কথা, ভুলে গেল তার পরিবারের লোকেরা উপোষ করে বসে আছে! এই প্রথম প্রহরে শিবের মাথায় অনিচ্ছাকৃত জল এবং বেলপাতা দিয়ে ব্যাধ তার সমস্ত জীবনের পাপ থেকে মুক্ত হল, মুক্ত হল হরিণীকে যেতে দিয়ে, তার নিজের মনের হিংসা বৃত্তি থেকে। সুতরাং শিবরাত্রির প্রথম প্রহরের পূজার ফল তখনই মেলে যখন জীব হিংসাশূন্য মনে, পরম পবিত্র মনে সেই শুদ্ধ, বুদ্ধ, মুক্ত জগৎ স্রষ্টা শিবের উপাসনা করে, পূজা করে। এই রকম পবিত্র মন নিয়ে ‘শিবরাত্রির’ প্রথম প্রহরের পূজা করলে অবশ্যই ফল লাভ করা যায়, শিব কৃপা অবশ্যই পাওয়া সম্ভব।
রাত্রি প্রথম প্রহর কেটে যাওয়ার পর হরিণীর পরিবারের তার ছোট বোন, বড় বোনকে খুঁজতে এসে সেই জলাশয়ের সামনে এসে উপস্থিত হল। তাকে দেখেই ব্যাধ আনন্দিত মনে সেই হরিণীকে হত্যা করার জন্য ধনুক তির সংযোজন করতে তার শরীরের দুলুনিতে আবার সেই বেলগাছ থেকে কিছু বেলপাতা এবং তার তৃষ্ণা মেটাবার জল থেকে কিছুটা জল, বেলগাছের নীচে শিবলিঙ্গের মাথার উপর পড়লো। এই ভাবে অজান্তে দ্বিতীয় প্রহরের শিবপূজা সেই ব্যাধের দ্বারা সম্পন্ন হল। বেলগাছে ব্যাধের নড়াচড়ার আওয়াজ পেয়ে সেই হরিণী ভাবল এইবার ব্যাধের হাতে আমার মৃত্যু অবশ্যই হবে, আর ব্যাধও তার ধনুকে তির সংযোজন করে হরিণীকে যেই হত্যা করতে যাবে, সাথে সাথে সেই হরিণী মানুষের গলায় ব্যাধকে বলে “তুমি আমাকে কেন হত্যা করছ?” ব্যাধ তার পরিবারের খুদা নিবৃত্তির কথা জানালে হরিণী আনন্দে বলে ওঠে “এতো খুব আনন্দের কথা। আমার এক পরিবার আছে, আমি জল খেয়ে পরিবারের লোকজনের সাথে দেখা করেই আমি তোমার কাছে ফিরে আসবো। তখন তুমি আমাকে হত্যা করে তোমার পরিবারের খুদা মিটিয়ো। হরিণীর কথা শুনে ব্যাধ তাকে বলে “তোমাকে যেতে দিলে তুমি আর ফিরে আসবে না। এর আগে একজন এইসব কথা বলে চলে গেছে আর ফিরে আসেনি”। হরিণী তখন ব্যাধকে বলে “তুমি আমাকে বিশ্বাস করো। আমি অবশ্যই ফিরে আসবো। আমি যদি ফিরে না আসি তবে সেই সব পাপরাশি আমাকে স্পর্শ করবে, পতিব্রতা পত্নীকে যদি কোন পুরুষ ত্যাগ করে তবে তার যে পাপ হয়, পত্নী পতিব্রতা হওয়া সত্ত্বেও যদি স্বামী সেই পত্নীকে ত্যাগ করে অন্য রমণীতে আসক্ত হলে যে পাপ হয়, বিষ্ণুভক্ত হয়ে যদি শিব নিন্দা করলে যে পাপ হয়, পিতা মাতার মৃত্যু তিথি জেনেও যে সেই কর্মানুষ্ঠান করে না তাতে যে পাপ হয়, যে জন অপরকে দুঃখ দিয়ে নিজে আনন্দ উপভোগ করে, তাতে যে পাপ হয়, সেই সব পাপ রাশি আমার মস্তকে অবস্থান করবে”। হরিণীর এই রকম কথা শুনে ব্যাধ তাকে যেতে দিলো।
এবার দ্বিতীয় প্রহর অতিক্রম হয়ে গেলে প্রথম হরিণীর স্বামী বাকি দুই হরিণীকে খুঁজতে এসে সেই জলাশয়ে উপস্থিত হল। অত্যন্ত স্বাস্থ্যবান এক হরিণকে দেখে ব্যাধ আনন্দিত মনে আবার ধনুকে তিন চড়াল। আবার ব্যাধের শরীরের দুলুনিতে কিছু বেলপাতা এবং জল সেই শিবলিঙ্গের মাথায় পড়ে। এটি ছিল তৃতীয় প্রহর। শিব আশুতোষ সেই জল এবং বেলপাতা পেয়ে আনন্দিত মনে ব্যাধকে আশীর্বাদ করেন। এইভাবে তৃতীয় প্রহরের পূজা সমাপ্ত হল। এইবার হরিণের দৃষ্টি ব্যাধের দিকে পড়তেই সে দেখল ব্যাধ তাকে মারতে উদ্যত। তখন সেই হরিণ ব্যাধকে অনুরোধ করে বলে “তুমি আমাকে হত্যা করবে জানি। কিন্তু কেন?” ব্যাধ সেই একই উত্তর দিলে হরিণ আনন্দে বলে “এতো খুব আনন্দের কথা, আমার শরীরের মাংসে এতো লোকের খিদে মিটবে! আমার তো জন্ম সফল হবে। কিন্তু আমাকে আমার পরিবারের সাথে দেখা করে আসতে দাও। তাদের সাথে দেখা করেই আমি ফিরে আসবো তোমার কাছে”। ব্যাধ সেই হরিণকে বলে “তুমি যদি আর ফিরে না আসো?” সেই হরিণ তখন তাকে বলে “কথা দিয়ে যে কথা না রাখে সে মিথ্যাবাদী, আর মিথ্যাবাদীকে সেই সমস্ত পাপ স্পর্শ করে যা অত্যন্ত ভীষণ। যেমন যদি কোন ব্যক্তি সন্ধ্যায় মৈথুন করে তবে যে পাপ হয়, শিবরাত্রিতে যে ভোজন করে তবে যে পাপ হয়, ভুল করে যে সাক্ষ্য দান করে, যে পরের ধন চুরি করে তাতে যে পাপ হয়, যে ব্রাহ্মণগণ সন্ধ্যা করে না তাতে যে পাপ হয়, অভক্ষ্য ভক্ষণ করলে যে পাপ হয়, সেই সমস্ত পাপ আমার মস্তকে অবস্থান করবে”। হরিণের এই কথা শুনে ব্যাধ তাকে যেতে দিলো।
এইবার হরিণের গৃহে গিয়ে সবাই একত্রীত হয়ে একে অপরের কথা শুনে প্রথম হরিণী বলে “প্রথমে আমি কথা দিয়েছি, তাই আমি যাবো”। হরিণী তার বোনকে বলে “তুমি আমার সন্তানদের দেখাশোনা করো”। দ্বিতীয় হরিণী বলে “দেখাশোনা আমি করতে পারবো, কিন্তু জানো সন্তান পালনের কোন অভিজ্ঞতা আমার আমার নেই, তাই তুমি থাকো, আমি যাচ্ছি ব্যাধের কাছে”। তাদের কথা শুনে বাড়ির কর্তা হরিণ বলে “শোন আমার সন্তান পালনের কোন অভিজ্ঞতা নেই। তাছাড়া ‘মা’ ছাড়া সন্তানেরা থাকতে পারবে না। তাই আমি যাবো ব্যাধের কাছে”। হরিণের কথা শুনে বাকি পরিবারের লোকেরা রোদন করতে শুরু করলো। তখন ঠিক হয় তারা তিনজনই যাবে ব্যাধের কাছে, বাচ্চাদের প্রতিবেশীদের কাছে রেখে। ব্যাধ তিন তিনটি হরিণকে দেখে ভীষণ আনন্দে যেই ধনুকে তির সংযোজিত করলো তক্ষুনি তার শরীরের দুলুনিতে কিছু বেলপাতা এবং জল সেই শিবলিঙ্গের মাথার উপর গিয়ে পড়লো। এইভাবে ব্যাধের অজান্তে চতুর্থ প্রহরের শিব পুজো সমাপ্ত হল, এবং সাথে সাথে ব্যাধের জীবনের সমস্ত পাপরাশি নষ্ট হয়ে গেল এবং তখনই শিবের কৃপায় তার শিব দর্শন লাভ হল। সেই ব্যাধ তখন ভাবতে থাকে ‘আমি সারা জীবন একি পাপ করেছি! যে সামান্য পশু হয়ে হরিণের মধ্যে পরোপকারের চিন্তা, আত্মত্যাগের চিন্তা, এই সব মহৎগুণ রয়েছে, আর আমি মানুষ হয়ে এই সব পশুদের হত্যা করছি, নিজের আর আমার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য! ধিক্ আমাকে! আজ থেকে আমি আর পশু হত্যা করবো না’। এই চিন্তা করার সাথে সাথে সে হরিণদের চলে যেতে বলে আর নিজের কৃতকর্মের জন্য আফসোস করতে থাকে। সেই মুহূর্তে ব্যাধের মন থেকে হিংসা, দ্বেষ দূর হল। সাথে সাথেই সেই শিবলিঙ্গ থেকে শিব সশরীরে ব্যাধের সামনে আত্মপ্রকাশ করে ব্যাধকে বলেন “তোমার পূজায় আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, তুমি যে চার প্রহর রাত জাগরণ করে জল বেলপাতা দিয়ে আমার পূজা করেছ, তাতে আমি অত্যন্ত সুপ্রসন্ন হয়েছি। তুমি আমার কাছে বর প্রার্থনা করো”। ব্যাধ তখন মহাদেবকে বলেন “প্রভু আপনার দর্শন মাত্রেই আমার সব পাওয়া হয়ে গেছে, আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই”। শিব তখন তার কথায় সন্তুষ্ট হয়ে বলেন “হে ভিল্ল ব্যাধ, এখন তুমি হিংসা থেকে মুক্ত হয়ে দিব্য অবস্থায় অবস্থান করছ। তোমার মধ্যে এখন কোন হিংসা, দ্বেষ, ছল, চাতুরী, কোন খারাপ মনোবৃত্তি নেই, তুমি এখন শুদ্ধ, মুক্ত অবস্থার মানুষ। তাই আমি তোমাকে আশীর্বাদ করছি এখন থেকে তোমার নাম হবে ‘গুহ’। তুমি হবে রাজ্যের অধীশ্বর, সমস্ত সুখ তুমি ভোগ করবে এখন থেকে। তোমার বংশ নিরন্তর বাড়তে থাকবে। তোমার কাছে একদিন দশরথ পুত্র রাম আসবেন। তাকে সভক্তি পূজা করো, তোমার দুর্লভ মুক্তি লাভ হবে। তোমার বংশধরেরা আমার পূজা ভক্তিসহকারে সর্বদাই করবে”।
এই সেই রামের ‘গুহ’-ক মিতা। রামের বনবাসের সময় যিনি সর্বদাই রামের সেবা করে গেছেন, রাম যাকে ‘আমার প্রিয় মিত্র’ বলে সম্বোধন করতেন। হরিণেরা সেই সময় সেখানে উপস্থিত থেকে শিব শঙ্করের দিব্যমূর্তি দর্শন করে মৃগশরীর ছেড়ে দিব্যশরীর ধারণ করে স্বর্গে গমন করে। আর মহাদেব এরপর ব্যাধেশ্বর মহাদেব রূপে অর্বুদাচল পর্বতে গিয়ে আবির্ভূত হন।
এইভাবে ‘ভিল্ল’ ব্যাধের মতো একজন দুর্জন অজান্তে শিবপূজা অরে শিবের মহান কৃপা লাভ করে তার নীচ মনুষ্য জন্ম সার্থক করে। এই হল শিব পূজা করার মহাফল। শিব হলেন আশুতোষ। তাই সহজেই তাকে সামান্য ভক্তিতে জয় করা যায়, নিজের করা যায়, শিব সান্নিধ্য লাভ করা যায়। শত সহস্র যজ্ঞানুষ্ঠান, শাস্ত্র আলোচনা, ধর্মানুষ্ঠান, তীর্থ যাত্রা করে যে ফল লাভ হয়, শিবরাত্রি ব্রত উদযাপন করলে তার সহস্র গুণ ফল লাভ হয়, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
Leave A Comment