«Prev  1 / 2

Capture

সদ্‌গুরুর মহিমা –

যা হতে সব, যাঁর দ্বারা সব, যাঁর মধ্যে সব, সবেতে যিনি এবং যিনি সব তিনিই সদ্‌গুরু বা পরমেষ্ঠিগুরু। তিনি সর্বরূপে রূপময়; কারণ সর্বরূপে তাঁর বিস্তার। তিনি নামময়; কারণ সব স্পন্দনে তিনি আছেন। সব মনের বৃত্তির মধ্যে তিনি; তাই গুরু ভাবময়। সব চৈতন্যের মধ্যে তিনি, তাই তিনি বোধময়। তাঁকে বাদ দিয়ে কোনও রূপ-নাম-ভাব নেই। কেবল এই ভাবটুকু ধরে তাঁকে হৃদয়ে প্রকাশ হতে দিতে হয়। তাঁর কৃপাতে লক্ষ বছর এক মুহূর্ত এবং এক মুহূর্তও লক্ষ বছরে পরিণত হয়। সুখ-দুঃখ সব স্বপ্নের মতো ভেঙে যায়। নিজেকে ভাবনা করার জন্য দরকার অখণ্ডতা। খণ্ড হল ইন্দ্রিয়ের এবং অখণ্ড হল অতীন্দ্রিয়ের।[read more=”Read More…” less=”Read less”]গুরু অলক্ষ্যে স্থূল থেকে সূক্ষ্মে, সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতরে এবং সূক্ষ্মতর হতে সূক্ষ্মতম অবস্থায় নিয়ে যান। ‘গুরুর অখণ্ডভাব’ বা ‘ব্রহ্মস্ফূর্তি’ তখন শিষ্যের মধ্যে আপনিই জেগে ওঠে। গুরু জোর করে কিছু করেন না। কারণ সব কিছুর মধ্যেই তিনি আছেন বলে তাঁর ধৈর্য, স্থৈর্য, সহিষ্ণুতার সীমা নেই। তাঁর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তাঁর নিজের ভাব তরঙ্গায়িত হয়, আবার নিজের মধ্যেই লীন হয়। সাধারণত সদ্‌গুরুকে মনুষ্যরূপে দেখে তাঁর মধ্যে মনুষ্যভাবই আরোপিত করা হয়। কিন্তু তিনি অতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নন। আকাশকে যেমন অতটুকু পাত্রে ধারণ করা যায় না, সেইরূপ সদ্‌গুরুকেও কেবল আধারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা যায় না। দেহ আধারকে তিনি ছুঁয়ে থাকেন মাত্র।[/read]

Capture

সদ্‌গুরুর কৃপা লাভের উপায় –

এখানে একদিন ‘একে’ (নিজের দিকে ইঙ্গিত করে) একজন জিজ্ঞাসা করেছিল – বাবা, গুরুকৃপা কী করে পাওয়া যায়?
তাকে বলা হল – তোমরা তো সৎসঙ্গ, সাধনভজন করেছ, নিশ্চয়ই জান।
জিজ্ঞাসু – সেই জানাতে কোনও কাজ হল না।
উত্তর – গুরু কৃপা পাওয়া যায় গুরুবোধে সব মানলে।[read more=”Read More…” less=”Read less”]প্রশ্ন – গুরুবোধ কী করে মেলে?
উত্তর – গুরুঋণ শোধ হলে।
প্রশ্ন – গুরুঋণ শোধ হয় কী ভাবে?
উত্তর – অহংকার, অভিমান ক্ষীণ হলে।
প্রশ্ন – অহংকার, অভিমান ক্ষীণ হয় কিসে?
উত্তর – ‘আমার ভাব’ ছাড়লে।
প্রশ্ন – ‘আমার ভাব’ ছাড়ে কিসে?
উত্তর – ‘তোমার ভাব’ বাড়লে।
প্রশ্ন – ‘তোমার ভাব’ বাড়ে কিসে?
উত্তর – ‘আমার’ জায়গায় তোমারকে মানলে।
প্রশ্ন – মানা যায় কী করে?
উত্তর – যে মেনে চলে তাঁর পাশে থেকে।
সে তখন আর প্রশ্ন করল না। বলল – সব উত্তর পেলাম; কিন্তু কে মেনেছে কী করে বুঝব?
বলা হল – যাঁকে গুরু বলে মেনেছ – তাঁকেই মানলে – তাঁকে কী মেনেছ?
প্রশ্নকারী – বলেন কী? তাঁর কাছে দীক্ষা নিয়েছি আর তাঁকে মানিনি?
বলা হল – গুরুকে তো দেখনি, গুরুর ছায়া দেখেছ। গুরুকে যেদিন মানতে পারবে সেদিন হবে যা দেখছি সব গুরুর রূপ, যা শুনছি সব গুরুর নাম। বলবে গুরু, এবার তোমার পদ্ধতি পেয়েছি।
প্রশ্নকারী এবার বলল – আর শুনব না।
জিজ্ঞাসা করা হল – কেন?
সে বলল – এ জীবনে হবে না।
উত্তরে তাকে বলা হল – এই মুহূর্তেই হতে পারে। এতদিন অকৃতজ্ঞ চিত্তে গুরুকে মেনেছ, অখণ্ডরূপে তাঁকে মাননি। গুরুকে বলতে বোঝায় যা বৃহত্তম, অজর, অমর, পুরাণপুরুষ, স্বয়ংপূর্ণ, স্বয়ংপ্রকাশ, অখণ্ড, ভূমা, সচ্চিদানন্দস্বরূপ, অদ্বয় ব্রহ্ম-আত্মা। এই অখণ্ড ভূমা ছাড়া গুরুর পরিচয় হয় না। যেমন সাগর কখনও ঝিনুক হয় না, সে রকম তাঁর ছায়াকে যদি অখণ্ড বলি তাও হয় না। গুরুর ঋণ শোধ কর। গুরু মন্ত্র দিয়েছেন, এবার তাঁর যন্ত্র হয়ে যাও।[/read]

Capture

গুরুই দেন গুরুদক্ষিণা, শিষ্য নয় –

গুরুর দক্ষিণা গুরুই দেন, শিষ্য দিতে পারে না; শিষ্যের নিজেস্ব কিছু থাকলে তো দেবে? গুরু নিজেকে প্রকাশ করেন মানারূপ বৃত্তি দিয়ে বা অখণ্ড বোধকে আপনবোধে ব্যবহার করে। ‘মেনে মানিয়ে চলা’-ই হল তাঁর ব্যবহার। যা-কিছু আছে অন্তরে-বাইরে সব গুরু – তা মানা হল গুরুদক্ষিণা। না-মানলে ভাবের ঘরে চুরি করা হয়।

Capture

পূর্ণতার প্রতিষ্ঠা হয় গুরুবাণীর মাধ্যমে ‘মেনে, মানিয়ে চললে’ –

ষোলো আনা মন না-দিলে অদ্বৈতের ঘরে যাওয়া যায় না। পরিপূর্ণ ভাবে অন্তর্মুখী হয়ে যেতে মা বা গুরু হাতে ধরে নিয়ে যান। শৈশব থেকেই মানুষকে গুরুই পথ দেখিয়ে নিয়ে যান। শুধু বলেন – চল। থেমে গেলে আঘাত পাবে। ব্যাথা, বেদনা আসে থেমে যাবার জন্যই। তাইতো গুরু বলেন – ক্রমের পথে বা ব্রজের পথে এগিয়ে চল। বাহির ছেড়ে অন্তরে চল। অন্তরের পথ ফুরায় না। কিন্তু বাইরের পথ সীমিত। বাইরে মা হল অবিদ্যামায়া, অন্তরে বিদ্যামায়া। অর্থাৎ মা আয়া। মা-কে পেতে হলে গুরুবাণী দিয়ে অন্তরে যেতে হয়।

Capture

গুরুর প্রকাশ গুরুবোধেই হয় –

গুরুর নির্দেশ অনুসারে চলতে চলতে এক সময় নিজেই গুরু হয়ে যাবে।

Capture

গুরুর প্রকাশ গুরুবোধেই হয়সংযত জীবনে একমুখী ভাবে গুরুকৃপায় হয় মুক্তি –

একমুখী ভাবে যেতে হলে বহুমুখী ভাবকে সংযম বা সংহরণ করতে হয়। বিনা সংযমে আধ্যাত্মিক পথে আসা বিলাসিতা। সেই জন্য গুরু নির্দেশ দেন – তুমি সংসারে থাক কিন্তু সংসারকে তোমার মধ্যে ঢুকতে দিও না। বিচার বা লক্ষ্য ঠিক রেখে সচেতন হয়ে সংসারে চলতে হয়।

Capture

গুরুকৃপায় সাধনক্রমে পঞ্চম স্তরে আত্মসত্তা পরমাত্মসত্তায় মিলে যায় –

সাধনার পঞ্চম স্তরে গিয়ে টের পাওয়া যায় যে জগত হল প্রতিবিম্ব। সবটাই অন্তরের অভিব্যক্তি। পঞ্চম স্তর অতিক্রম করে তারপর পৌঁছান যায় পরাপ্রকৃতিতে। এই পরাপ্রকৃতি হল ব্রহ্মবিদ্যা, আত্মবিদ্যা এবং আকাশতত্ত্বের উপরে যার স্থান। এখানে গুরুশক্তি দিয়ে যায় আকর্ষণীশক্তি। এই আকর্ষণী শক্তি দিয়ে যায় আত্মসত্তা। আত্মসত্তা পৌঁছে দিয়ে যায় পরমাত্মসত্তায়।

Capture

গুরুবাণী হল মহামন্ত্র – তার অভিনব মহিমা –

গুরুবাণী হল শ্রীরামচন্দ্রের তীর, শ্রীকৃষ্ণের সুদর্শন, শিবের ত্রিশূল, চিদানন্দময়ী মায়ের হাতের খাঁড়া। জগতে প্রয়োজন হলে তাঁরা এই মহামন্ত্র দিয়ে কল্যাণসাধন করেন। হৃদয়ে বিজ্ঞানরূপী গুরু বা মা মহাতেজে জেগে ওঠেন। জেগে না-উঠলে শোধন আরম্ভ হয় না। জেগে উঠলে তমোরজোগুণের প্রভাব কেটে যায় এবং প্রাণের নিস্তেজতা, মনের অলসতা এবং দেহের জড়তাও কেটে যায়।

Capture

গুরুর জীবন –

আনন্দ দুর্লভ বস্তু। ধনুকের তীর একবার নিক্ষেপ করলে যেমন আর ফিরে আসে না, সেইরূপ হৃদয়ের জিনিস একবার বাইরে বেড়িয়ে গেলে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। এ ভাবে জীবনশক্তি বিকৃত, মলিন ও আবৃত হয়। তখন কান্নাকাটি করলেও আর পাওয়া যায় না। কারণ গুরু কোমল হতেও কোমল আবার কঠিন হতেও কঠিন। এই দু’টি ভাব যাঁর মধ্যে আছে তিনিই সদ্‌গুরু।[read more=”Read More…” less=”Read less”]সদ্‌গুরু হলেন জীবলোকে ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ মূর্তি। সদ্‌গুরু ব্যতীত ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না। যেমন গরুর দুধ আছে কিন্তু তা শুধু বাঁটের মুখে মেলে। তা ছাড়া গরুকে dissect করে কোথাও পাওয়া যায় না। আবার দুধে মাখন থাকে তাও মন্থন না-করে পাওয়া যায় না। সেইরূপ বিশ্বজুড়ে ভগবান আছেন সত্য, কিন্তু তাঁকে সদ্‌গুরু বা সিদ্ধ মহাপুরুষদের মধ্যেই পাওয়া যায়। তা শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিশ্বাস মন্থন করে পাওয়া যায়। সেই জন্য মাখন হল কোমল। কঠিন হল তপস্যা। এই দুই মিলে হল গুরুর জীবন।[/read]

Capture

গুরু হলেন ত্যাগ মূর্তি –

গুরু হলেন ত্যাগের প্রতিমূর্তি। সেই জন্য তিনি চেষ্টা করেন যেন শিষ্যের মধ্যেও ত্যাগের ধারা প্রবাহিত হয়। যদি তা না-হয় তবে শিষ্য সাধনার মাঝপথে আটকে যায়। কিন্তু ত্যাগের ধারা প্রবাহিত হতে দিলে শিষ্যও গুরু হয়ে যায়।

Capture

সদ্‌গুরুর মাহাত্ম্য –

দেবতা, গুরু ও ইষ্টকে যে মনুষ্য জ্ঞান করে তার অনুভূতি সিদ্ধ হয় না। মানুষের বেশ ধারণ করেও গুরু তাঁর দিব্যচৈতন্যের বোধ হারান না। লোকে তাঁর উপর মনুষ্যবোধ আরোপ করে কতখানি নিচে নামিয়ে আনে![read more=”Read More…” less=”Read less”]এখানে ভজনগুলি দিয়ে তোমাদের ground তৈরি করা হচ্ছে। মনের ভিতরে তো সব জঙ্গল। সেই জঙ্গল পরিষ্কার করা কী সোজা কথা? হয়তো গুরু একবার জঙ্গল পরিষ্কার করলেন এবং ভাবলেন কিছু construction করবেন, কিন্তু আবার দেখেন আগাছায় জঙ্গল হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ গুরুর কাজ ভণ্ডুল করে আনন্দ পায়।
গুরু হলেন ক্ষমাঘন, ধৈর্যের প্রতিমূর্তি। তিনি কারও দোষ দেখতে পারেন না। এক ধৈর্য কারও নেই। তিনি শিষ্যের জন্য লক্ষ কোটি বৎসর অপেক্ষা করে থাকেন। গুরুর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ থাকলে এ কথার অন্যথা হয় না।
জিহ্বায় তাঁর কথা ছাড়া অন্য কথা কেউ উচ্চারণ করবে না। কাউকে আঘাত দিলে জানবে তাতে গুরুকেই আঘাত দেওয়া হয়।[/read]

Capture

সদ্‌গুরু ও সৎপ্রসঙ্গ –

যাঁর কাছ থেকে, যাঁর সঙ্গ করে, যাঁর বাক্য বা বাণী শুনে অনুভূতির সমস্ত স্তর পরিষ্কার হয়ে যায়, জ্ঞানস্বরূপ সেই গুরুমূর্তিই হলেন সর্বোত্তম দেবতা। তিনিই সদ্‌গুরু। এই প্রত্যক্ষ সদ্‌গুরু পেয়ে যারা অন্য দেবতা বা অন্য অন্য মতপথের সন্ধানে ঘোরে ও ভজন করে, সেই সকল গোঁড়া, অন্ধ, মতলবিগণ সত্যের সন্ধান কোনও দিনই পায় না। তাড়া সত্যঘাতী, সত্যনাশী। তাদের সঙ্গ যারা করে তারাও দুর্ভাগা।

Capture

অদ্বৈতবোধে নিজেকে ব্যবহার দ্বারাই সদ্‌গুরু পূজা সিদ্ধ হয়অদ্বৈতবোধে নিজেকে ব্যবহার দ্বারাই সদ্‌গুরু পূজা সিদ্ধ হয় –

গুরুভাবের অংশ-বিশেষ হল দেবভাব। দেবভাবের দ্বারা হয় দেবভাবের পূজা এবং গুরুভাবের পূজা। অদ্বৈতবোধে নিজেকে ব্যবহারের নাম হল সদ্‌গুরু পূজা।

Capture

*গুরুমহিমার অভিনবত্ব –

গুরু যেখানে রুখে দাঁড়ান সেখানে কারও কিছু বলার থাকে না। এরপরে দেবলোকে গিয়ে দেবলোক ও নরলোকের নূতন manifesto তৈরি হল। গুরুভক্ত, দেবভক্ত, আত্মযাজী, যোগসিদ্ধ, যোগসাধক, শরণাগত, আত্মানুসন্ধারত, ইষ্টপ্রীতি ও গুরুপ্রীতি কার্যে রত – এরূপ বারোটি ক্ষেত্রে যমরাজ গুরুর আজ্ঞা ছাড়া গুরুর আশ্রিতকে পৃথিবী থেকে নিয়ে যেতে পারেন না।

Capture

গুরুপূর্ণিমার বিশেষত্ব –

সদ্‌গুরু যা বলেন সবই direct from the source । এগুলো imaginary ও নয় intellectual ও নয়। এ সবই beyond our intellect অর্থাৎ বুদ্ধি দিয়ে এর বিচার বা বিন্যাস সম্ভব নয়। তিনি পরমতত্ত্ব স্বরূপ। বহুযুগ আগে এই বিশেষ পূর্ণিমার দিন গুরুরূপে এসে এই পরমতত্ত্ব তিনিই প্রকাশ করেছিলেন। পূর্ণিমা – পূর্ণ যে মা। অর্থাৎ মা যেখানে শক্তি বিভূতিতে পূর্ণ।[read more=”Read More…” less=”Read less”]যদিও পরদিন তার কলা কম হতে থাকে – কিন্তু সদ্‌গুরুর জ্যোতির কোনও ঘাটতি হয় না। তিনি স্থূল সূক্ষ্ম কেন্দ্রকে ছাড়িয়ে তুরীয়তে থাকেন। বহির্জগতের cause and effect এর বাইরে না-গিয়েও তিনি এসবের ঊর্ধ্বে। জগৎ তার কাছে একটা dot-এর মতো। আকাশে যেমন লক্ষ লক্ষ তারার dot কিন্তু কাছে গেলে এই এক একটি তারার মধ্যে কতগুলি পৃথিবী ভরে দেওয়া যাবে তার ঠিক নেই। আত্মাকে তেমনি অজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে সসীম জড়। কিন্তু চৈতন্যের দৃষ্টিতে তিনিই একমাত্র আছেন – তিনি ছাড়া আর কিছুই নেই। হরিই সব। হরি বিনে আর কিছুই নেই। আত্মাস্মৃতি, হরিস্মৃতি আমরা ভুলে আছি বলেই আমাদের এত দুঃখ কষ্ট। সেই হরিস্মৃতি জাগ্রত করবার জন্যই গুরু মন্ত্র দেন – কাউকে হরিওঁ, কাউকে শিবওঁ বা কাউকে গুরুওঁ। গুরু শিষ্যের অতীত জানেন বলেই অতীত অতীত জীবনের সংস্কার অনুসারে গুরু মন্ত্র দেন যার যেটা প্রয়োজন। গুরুই আত্মা স্বয়ং, আত্মাই গুরু। তাই আমরা যে বলি ‘আমার গুরু’ তা না-বলে বলা উচিৎ ‘গুরুর আমি’। এই জগৎ সংসার সবই শিশুর হাতের খেলনার মতো। খেলনা পেলে শিশু প্রথম তা নিয়ে খেলে পরে খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়ে। তেমনি যেদিন আত্মার ডাক আসবে সব ফেলে তাঁর কাছেই সবাই চলে যাবে জগৎ সংসারের কথা ভুলেও মনে পড়বে না।[/read]

Capture

প্রজ্ঞানঘন পরমেষ্ঠিগুরুর মহিমা অনবদ্য ও অভিনব –

জ্ঞানকে অজ্ঞানরূপে ব্যবহারের ফলেই অন্তর্বৃত্তি তৈরি হয়। অন্তর্বৃত্তি বাড়ানো কমানো যায় – তবে শূন্য করতে গেলে যে অভ্যাসের দরকার হয় সেই অভ্যাস যথার্থ অনুভবসিদ্ধের কাছে তালিম না-নিলে সম্ভব হয় না। তাই বলা হয় – ‘গুরু মিলে লাখে লাখে শিষ্য মিলে এক’ আবার ‘শিষ্য মিলে লাখে লাখে গুরু মিলে এক’। এই দুটি কথার তাৎপর্য ভিন্ন কিন্তু গুরুত্ব সমান। যে শিষ্য অন্তরে পূর্ণ জিজ্ঞাসা নিয়ে এসেছে তার পক্ষে গুরুর সামান্য সাহায্যই যথেষ্ট। তাকে আর প্রাথমিক যোগের শিক্ষা নিতে হয় না – এটা কর ওটা করো না, এটা খাবে ওটা খাবে না, এত জপতপ করবে বা এতক্ষণ ধ্যান করবে ইত্যাদি। কারণ এসব তার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন তার প্রয়োজন একজন অনুভবসিদ্ধ প্রত্যক্ষ অনুভূতি। গুরুও এমন একজন উপযুক্ত শিষ্যের প্রতীক্ষায় থাকেন। এমন শিষ্য লাখে একজন মেলে।

Capture

গুরু ও গুরুদক্ষিণা –

গুরু হলেন স্বয়ং বেদ বা জ্ঞানস্বরূপ। তিনি হলেন বেদ (জ্ঞান) personified । He is full of Bliss, reservoir of love, sinless, egoless, free from pride and arrogance, desire, anger, error. His spontaneous love does not depend on anything, not with any motive. He is the liberated soul who unfolds the Oneness of the Self to the seeker, who is humble and submissive. He delivers the most precious thing in a very lucid manner. তিনি অভয় দেন ‘মা কৃষ্ট মা ভ্রষ্ট’। শিষ্যকে বলেন, তোমার সব ভবব্যাধি থেকে তোমাকে মুক্ত করতে পারি কিন্তু তোমাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে, দক্ষিনা দিতে হবে, আজীবন আমরণ অনুসরণ করতে হবে। তোমাকে হতে হবে an eternal follower of Oneness – এ-ই হল গুরুদক্ষিণা।[read more=”Read More…” less=”Read less”]দ্বৈতবোধে হৃদয়দুয়ার খোলে না। সবাইকে অখণ্ড আপনবোধে মানলে আর দোষদর্শন হয় না। আবার দোষদর্শন করলে অখণ্ড আপনবোধ মানা হয় না। তাই তো তয়াদের প্রথম থেকেই অখণ্ড আপনবোধে মানার কথা বলা হয়েছে। জীবনে এই ভাবে চললে গুরু তাঁর fire of wisdom দিয়ে তোমার কর্তৃত্ব, ভক্তৃত্বকে পুড়িয়ে নাশ করে দেবেন। সেই জন্য গুরুর কাছে, তাঁর পদতলে – ‘প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া’ থাকতে হবে। হতে হবে completely self-surrendered। কিন্তু এ বড় কঠিন কাজ। সেখানে last speck of desire-ও থাকবে না। গুরুও অনেক পরীক্ষা করবেন, সবচেয়ে প্রিয় বস্তু সরিয়ে নেবেন। হয়ত জীবনের only support-কেও সরিয়ে দেবেন। second support থাকলে complete surrender হয় না। প্রথমে গুরুবাণী হৃদয়ে বসবে, তারপর হৃদয় থেকে যাবে হৃদয়ের গভীরে। ধীরে ধীরে ধ্যানে ও পড়ে সমাধিতে – সর্বত্র এক গুরুই বিরাজ করবেন। এক ভাব দ্বারা নিরন্তর ভাবিত হলে বিরুদ্ধতা চলে যায়। সমভাবে প্রতিষ্ঠিত মন হয় শান্ত। সেখানে থাকে না কোনও বিকার, আকার, অহংকার। সর্বসম, শান্ত, নির্বিকার, নিরাকার, চিদাকাশে হয় সচ্চিদানন্দস্বরূপে প্রতিষ্ঠা। যা তোমরা বাহ্যত দেখ তা হল দেহ, ইন্দ্রিয়, মন, অহংকার ও বুদ্ধি। বুদ্ধির innermost chamber-এ আছে চিদাভাস or the unmanifest বা অব্যক্ত। And in the centre of the unmanifest lives the Supreme I, All Divine I – which is eternally One, has no second, no parallel, no shadow, no imitation – the alfa and omega of your spiritual Sadhana.[/read]

Capture

*ষড়ৈশ্বর্য –

জ্ঞান, বৈরাগ্য, শ্রী, যশ, শৌর্য ও বীর্য – এ হল ঈশ্বরের ষড়ৈশ্বর্য। অপরপক্ষে Love, Lord, Liberty, Light and Law হল পরব্রহ্মের ঐশ্বর্য। তিনি স্বয়ং বিগ্রহ। তাই তিনি ‘স্বয়ং-এ স্বয়ং, আপনে আপন, পরমে পরম’। তাঁকে পেতে one must be loyal to the Guru । এখানে intellectual jugglery-র কোনও স্থান নেই। কর্তৃত্বের বাহাদুরি করলে বিকার ভোগ করতেই হবে। শুদ্ধবোধে প্রতিষ্ঠিত না-হয়ে গুরু সাজলে বিকার অনেক বেশি ভোগ করতে হবে।

Capture

গুরু ও ইষ্টের তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য –

গান শিখতে হলে আগে শুনতে হয়। শুনতে শুনতে গুরু ঢুকে যায় ভিতরে, পরে তিনিই গান হয়ে, ভজন হয়ে বেরিয়ে আসেন। গুরুরূপে যে মা আসেন তার ঋণ শোধ করা যায় না। সাধনা করে ইষ্টদর্শন হলে আর গুরুকে খুঁজে পাবে না। গুরু তখন ইষ্টের সঙ্গে মিলে মিশে যান। আর প্রাণের বৃত্তি যতক্ষণ আছে ততক্ষণ যে গুরুর মহিমা গাইবে সেই গুরুর সাথে মিশে যাবে। গুরুকে পেলে ইষ্টকেও পাওয়া যায়। তবে ইষ্টকে পেলে গুরুকে নাও পেতে পার। তাই সব ভজনের শ্রেষ্ঠ ভজন হল গুরুভজন।

Capture

গুরুপূর্ণিমার তাৎপর্য –

গুরুপূর্ণিমা – গুরুকে পূর্ণ করে মানাই হল তার উদ্দেশ্য। একতা, পূর্ণতা, সমতা হল আত্মবোধ – তাকেই এখানে গুরু বলা হয়েছে।

sep2

The Characteristics and Duties of Disciples

শিষ্যের লক্ষণ ও কর্ত্তব্য

Capture

তন্ত্রান্তরে –

তন্ত্রান্তরে কথিত আছে যে, –যে ব্যক্তি পুণ্যবান্ ধার্ম্মিক, শুদ্ধ, গুরু-ভক্ত, জিতেন্দ্রিয় ও দানধ্যানপরায়ণ এই সকল ব্যক্তিই শিষ্য হইবার উপযুক্ত পাত্র।।

Capture

সারদাতিলকে –

সারদাতিলকে লিখিত আছে যে, –যে ব্যক্তি কুলীন, শুদ্ধাত্মা, পুরুষার্থপরায়ণ, বেদজ্ঞ, কুশল, কামহীন, জীবহিতৈষী, আস্তিক, স্বধর্ম্মরত, পিতামাতার হিতকারী এবং যে ব্যক্তি নাস্তিকসঙ্গ পরিত্যাগ করিয়াছে এবং কায়মনোবাক্যে গুরুসেবায় নিরত থাকে, এরূপ বুক্তিই শিষ্য হইবার উপযুক্ত পাত্র।।

Capture

সময়াচারতন্ত্রে –

সময়াচারতন্ত্রে লিখিত আছে, -যে, যে ব্যক্তি গুরুমন্ত্রপরায়ণ, গুরুভক্ত, ধর্ম্মাদিসংযুক্ত, গুণবান্‌, দেবপূজাপরায়ণ, গুরুদত্ত মন্ত্রে বিশ্বাসবান্‌, উদার-বুদ্ধি এবং গুরুপদিষ্ট মার্গে সত্যবুদ্ধি, এরূপ লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিই উপযুক্ত শিষ্য বলিয়া আভিহিত।।

Capture

রুদ্রজামলে –

অন্তরে নিষিদ্ধশিষ্যের লক্ষণ কথিত হইতেছে। -গুরুযামলে লিখিত আছে, যে, –যে ব্যক্তি কামুক, কুটিল, সত্যবর্জ্জিত, লোকনিন্দিত, অবিনীত, পুল্রহীন, কামাদিরিপুপ্রিয়, সদা পাপকর্ম্মে রত, বিদ্যাশূন্য, জড়াত্মক, কলিদোষযুক্ত, বেদক্রিয়াবর্জ্জিত, অসমর্থ, আশ্রমাচারশূন্য, অশুদ্ধচিত্ত, সদা শ্রদ্ধারহিত, ক্রোধী, ভ্রান্ত, অসচ্চরিত্র, গুণহীন, পরদাররত, উগ্রস্বভাব, ভক্তিত্ত ও নিন্দনীয়, এতাদৃশ শিষ্যকে পরিত্যাগ করিবে।।

Capture

আগমসারে –

আগমসারে লিখিত আছে, যে, -যাহারা অলস, মলিনচিত্ত, সর্ব্বদা ম্রিয়মাণ, দাম্ভিক, কৃপণ, দরিদ্র, রোগী, রুষ্ট, বিলাসী, অসূয়া ও মাৎসর্যপরায়ণ, কর্কশবাদী, পরদাররত এবং যাহারা ন্যায়বর্জ্জিত পথাবলম্বনে অর্থোপার্জ্জন করে ও বিদ্বান্‌গণের প্রতি শত্রুতাচরণ করে, এতাদৃশ ব্যক্তি শিষ্য হইবার উপযুক্ত নহে।।

Capture

রুদ্রযামলে –

অন্তরে গুরু ও শিষ্যের কর্ত্তব্যাকর্ত্তব্য কথিত হইতেছে। – রুদ্রযামলে কথিত আছে, যে, – কদাচ গুরুর আজ্ঞা লঙ্ঘন করিবে না এবং সহসা কোন বাক্যের প্রত্যুত্তর প্রদান করাও উচিত নহে। দিবানিশি দাসের ন্যায় গুরুর আজ্ঞা প্রতিপালন করিবে।।

Capture

গুরুগীতা –

গুরুদেবই পিতা-মাতা, গুরুই শিষ্যের দেবতা এবং গুরুই একমাত্র গতি, – অর্থাৎ ভবসাগরে পরিত্রাণ পাইবার উপায় । শিব ক্রুদ্ধ হইলে, গুরুদেব রক্ষা করিতে পারেন, কিন্তু গুরু রুষ্ট (ক্রোধ করিলে) হইলে কেহই রক্ষা করিতে পারে না।।

Capture

গুরুগীতা –

ইষ্টমন্ত্রদাতা গুরুদেবকে যে সাধারণ মানুষ মনে করে, এবং ইষ্ট মন্ত্র কে অক্ষর বিশেষ ও প্রতিমা কে শিলা (পাথর) বলিয়া জ্ঞান করে, অন্তিমে দেহ পরিত্যাগ করিয়া সে ঘোর নরকে গমন করিয়া থাকে ইহাতে সন্দেহ নাই।।

Capture

গুরুগীতা –

ভক্তি সহকারে গুরুদেবের আরাধনা (ভক্তি-শ্রদ্ধা সহিত গুরুদেবের সেবা-শুশ্রূষা, পূজাদি) করিলে কাশী ক্ষেত্রে বাস ও গঙ্গা জল পানের ফল হয় । অতএব গুরুদেব কেই বিশ্বেশ্বর, পরিত্রাণ কর্ত্তা মূর্ত্তিমান ব্রহ্মের ন্যায় অবশ্য মনে করিবে।।

Capture

গুরুগীতা –

গুরুর তত্ত্ব – অর্থাৎ তিনি কি প্রকার, কি কি গুণ সম্পন্ন সম্যক্‌ না জানিয়া যজ্ঞ, ব্রত, তপস্যা, দান, মন্ত্র জপ, তীর্থ ভ্রমণ প্রভৃতি নানারূপ সৎকর্ম আচরণ করিলেও তাহা নিষ্ফলই হইয়া থাকে, ইহা তে কিছুমাত্র সন্দেহ নাই।।

Capture

গুরুগীতা –

হে দেবী ! পিতা হইতে শরীর উৎপন্ন হয়, গুরুদেব অজ্ঞানান্ধকার নাশ করিয়া বিশুদ্ধ জ্ঞান দান করিয়া থাকেন, এই জন্য জন্মদাতা পিতা হইতে গুরুই শ্রেষ্ঠ । এই দুঃখময় সংসার-সাগরে গুরু হইতে শ্রেষ্ঠ (সর্ব্বদুঃখনিবারক) আর কেহই নাই।।

Capture

গুরুগীতা –

গুরু সেবা না করিলে মন পবিত্র হয় না । শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব ও অন্যান্য ধর্ম্মাবলম্বী ভ্রান্তচিত্ত (অপবিত্র চঞ্চল মন) ব্যক্তির কাছে বেদশাস্ত্র, ইতিহাস, পুরাণোক্ত যন্ত্র, মন্ত্র, মারণ, উচাটন প্রভৃতি কর্ম্মের অনুষ্ঠান সকলই বিফল হইয়া থাকে।।

Capture

গুরুগীতা –

গুরুর পাদোদক (পদধৌত জল) সংসার-সাগর পার করিয়া দেয় এবং অজ্ঞানের মূল কারণ নাশ করিয়া থাকে ও জন্ম-কর্ম্ম নিবারণ করে, – সংসারে পুনরায় জন্মগ্রহণ করিতে হয় না । অতএব নির্ম্মল জ্ঞান ও বৈরাগ্য লাভের জন্য গুরুদেবের পাদোদক পান করা অবশ্য কর্ত্তব্য।।

Capture

গুরুগীতা –

শুধু গুরুনাম উচ্চারণ করিয়া পরশুরাম মাতৃহত্যা মহাপাপ হইতে এবং দেবরাজ ইন্দ্র ব্রাহ্মণ –বধজন্য ঘোর পাপ হইতে মুক্তিলাভ করিয়াছিলেন।।

Capture

গুরুগীতা –

জন্মদাতা পিতা-মাতাকে অতি যত্নে পূজা করিতে হয় কিন্তু ধর্ম্মাধর্ম্ম (পাপ-পুণ্য) পথ প্রদর্শক গুরুদেবকে পিতা-মাতা হইতেও অধিক যত্নে সেবা করতে হয় । পাপ-পুণ্য পথ দেখান বলিয়া গুরুদেবই অধিক পূজনীয়।।

Capture

গুরুগীতা –

গুরুদেবের মুখে মন্ত্রব্রহ্ম বর্ত্তমান আছেন । তাঁহার অনুগ্রহেই ঐ মন্ত্রব্রহ্ম পাওয়া সম্ভব হয়।।

Capture

গুরুগীতা –

গুরু শব্দের আদি অক্ষর ‘গু’ মায়াদি-গুণবোধক, দ্বিতীয় অক্ষর ‘রু’ মমতা-ভ্রম নাশক দ্বিতীয় ব্রহ্মের ন্যায় । দুই অক্ষর মিলিত ‘গুরু’ শব্দে সগুণ নির্গুণ উভয় অর্থবোধক দ্বিতীয় ব্রহ্মস্বরূপই বুঝিতে হইবে।।

Capture

গুরুগীতা –

‘গুরু’ শব্দের ‘গ’ বর্ণ সিদ্ধিদায়ক, ‘র’ সর্ব্বাপাপবিনাশী ও ‘উ’ শম্ভু অর্থাৎ শিব-তুল্য । অতএব সিদ্ধিদায়ক, পাপহারী, শিবের ন্যায়, ত্রিবর্ণ যুক্ত গুরু শব্দের এই-ই অর্থ জানিবে।।

Capture

গুরুগীতা –

কোটি কোটি ধন-রত্ন-মণি-মুক্তা প্রভৃতি দান করিলে এবং মহাপাতকনাশক কোটি কোটি কষ্টসাধ্য চান্দ্রায়ণ ব্রত প্রভৃতির আচরণ করিলে ও কোটি কোটি অশ্বমেধ প্রভৃতি বড় বড় যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিলে যে সকল ফল হইয়া থাকে, একমাত্র গুরুদেবের পাদুকা স্মরণ করিলে তদপেক্ষা অধিক পুণ্য হয়।।

Capture

গুরুগীতা –

মহামন্ত্র-শ্রেষ্ঠমন্ত্র কোটি কোটি বার জপ করিলে ও কোটি কোটি তীর্থ জলে অবগাহন – স্নান করিলে এবং কোটি কোটি দেবতার পূজা করিলে যে সব ফল হয় – হে দেবী ! একমাত্র গুরুর পাদুকা স্মরণে তদপেক্ষা অধিক ফল বা পুণ্য হইয়া থাকে।।

Capture

গুরুগীতা –

মহারোগ – শরীরে কঠিন পীড়া জন্মিলে, নানারূপ উপদ্রব উপস্থিত হইলে, মহাদোষ – অত্যন্ত ত্রুটিযুক্ত হইলে, ভয়ানক ভয়ের কারণ উপস্থিত হইলে, ঘোর বিপদে পড়িলে ও কোন কারণে মহাপাপে লিপ্ত হইলে একমাত্র গুরুর পাদুকা স্মরণ করিলেই পরিত্রাণ পাওয়া যায় । শ্রী গুরুর চরণ সর্ব্বদা মনে মনে স্মরণ করিলে রোগ-পীড়া ও পাপাদি ভয় প্রভৃতি শিষ্যকে স্পর্শ করিতে পারে না।।

Capture

গুরুগীতা –

লজ্জা পরিত্যাগ করিয়া দীর্ঘ দণ্ডের ন্যায় ভূমিতে লম্বমান হইয়া সাষ্টাঙ্গে গুরুদেবকে নমস্কারপূর্ব্বক নিজ আত্মা, স্ত্রী, পুত্র সকলই শিষ্য গুরুদেবকে দান করিবে।।

Capture

গুরুগীতা –

গুরুদেবের সন্তোষের নিমিত্ত – আনন্দবর্দ্ধনের জন্য শিষ্য তাঁহাকে বসিবার আসন, শয়ন করিবার শয্যা, কাপড়, বাহন – ঘোড়া, উট, হস্তী প্রভৃতি, নানারূপ গায়ের অলঙ্কার ভক্তি সহকারে দান করিবে।।

Capture

গুরুগীতা –

দেবি ! গুরুতে ভক্তিহীন হইয়া ভূলবুদ্ধিবশতঃ যে ব্যক্তি গুরু ভিন্ন অন্য কোন বিজ্ঞ লোকের নিকট শিব ও শক্তিবিষয়ক তন্ত্রোক্ত পূজা ও সাধন-প্রণালী এবং অন্যান্য নানাবিধ ধর্ম্মশাস্ত্র অভ্যাস করিয়া শাস্ত্রচর্চ্চায় রত হয় তাহার সকল শাস্ত্রচর্চ্চাই নিষ্ফল হইয়া থাকে।।

Capture

গুরুগীতা –

গুরুই ব্রহ্ম, গুরুদেবই বিষ্ণু এবং দেবদেব মহেশ্বর শিব, ও গুরুদেবই পরব্রহ্ম তুল্য । (সৃষ্টি, পালন, সংহার ও মুক্তিদাতা) এইরূপ ব্রহ্মা-শিব-পরব্রহ্ম তুল্য শ্রীশ্রীগুরুদেবকে নমস্কার।।

Capture

গুরুগীতা –

সমস্ত ধর্ম্মশাস্ত্রের মুকুটমণিতে যাঁহার পাদপদ্ম বিরাজিত এবং বেদান্তশাস্ত্ররূপ-পদ্ম-বিকাশে যিনি দিবাকর সুর্য্যের ন্যায় (স্মৃতি, পুরাণ, দর্শন, বেদান্ত প্রভৃতি ধর্ম্মশাস্ত্র ভালরূপ জানেন ও বিশেদভাবে উপদেশ দানে সমর্থ), ব্রহ্মজ্ঞাপক সেই শ্রীগুরুদেবকে নমস্কার।।

Capture

গুরুগীতা –

যিনি স্থাবর, জঙ্গম ও চরাচর সমগ্র বিশ্ব ব্যাপিয়া বিরাজিত আছেন ও জীবকে মুক্তিপথ দেখাইয়া থাকেন, সেই জ্ঞানচক্ষু-প্রকাশক শ্রীগুরুদেবকে নমস্কার।।

Capture

গুরুগীতা –

যিনি চিন্ময়রূপে – অতি সূক্ষ্মরূপে চরাচর ত্রিলক (স্বর্গ, মর্ত্ত্য, পাতাল) ব্যাপিয়া বর্ত্তমান আছেন ও ব্রহ্মপদ দেখাইতেছেন, অজ্ঞাননাশক সেই শ্রীগুরুদেবকে নমস্কার।।

Capture

গুরুগীতা –

যিনি নিত্য চৈতন্যস্বরূপ জ্ঞানতুল্য আকাশ ও বিন্দুনাদের অতীত নিষ্কলঙ্ক অতি-পবিত্র শান্তপ্রকৃতি, সেই গুরুদেবকে নমস্কার।।

Capture

গুরুগীতা –

যাঁহাকে স্মরণ মাত্রই প্রকৃত জ্ঞান নিজেই উপস্থিত হয়, তিনিই সর্ব্বশক্তিসম্পন্ন গুরু, সেই জ্ঞানপ্রদ গুরুদেবকে নমস্কার।।

Capture

গুরুগীতা –

যাঁহাকে কোনরূপ মল বা পাপ স্পর্শ করিতে পারে না, পরিষ্কার অতি পবিত্র শান্তস্বভাব, অথচ স্থাবর জঙ্গমযুক্ত নিশ্চল বিশ্বকে জুড়িয়া অবস্থান করিতেছেন, সেই সর্ব্বব্যাপী জ্ঞানদাতা শ্রীগুরুদেবকে নমস্কার।।

Capture

গুরুগীতা –

গুরুদেবের আদিতে কিছুই নাই, তিনিই আদি পুরুষ, শ্রেষ্ঠদেবতা । এই বিশ্বসংসারে গুরু হইতে শ্রেষ্ঠ আর কিছুই নাই । জগতের শ্রেষ্ঠ সেই গুরুদেবকে নমস্কার।।

Capture

গুরুগীতা –

ব্রহ্ম-বিষ্ণু-শিবশক্তিসম্পন্ন গুরুদেব হইতে শ্রেষ্ঠ জগতে আর নাই, – শ্রুতি শাস্ত্র নেতি নেতীতি (নাই নাই) শব্দে তাহা সমর্থন করিয়াছেন । অতএব কর্ম্ম এবং বাক্য দ্বারা সর্ব্বদাই গুরুদেবের ভজনা করিবে।।

Capture

গুরুগীতা –

ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব শুধু গুরুসেবা করিয়া গুরুর অনুগ্রহেই সৃষ্টি-স্থিতি-সংহার কার্য্যের অধিকারী হইয়াছেন।।

Capture

গুরুগীতা –

দেবতা, কিন্নর, গন্ধর্ব, পিতৃগণ, যক্ষ ও চারণগণ এবং ঋষিরা কেহই গুরুর-শুশ্রূষার (সেবা-বিধির) নিয়ম জানেন না।

Capture

গুরুগীতা –

গুরুর সেবা (ভজন) ভিন্ন দেবতা, গন্ধর্ব, পিতৃগণ, যক্ষ ও কিন্নরগণ এবং মন্ত্র-সিদ্ধ ঋষিগণ কেহই মুক্তিলাভ করিতে পারেন না।

Capture

গুরুগীতা –

পরব্রহ্ম-চিন্তায় যিনি আনন্দ অনুভব করেন, (সর্ব্বদা ব্রহ্ম চিন্তামগ্ন, অতএব আনন্দস্বরূপ) শ্রেষ্ঠ সুখদাতা, প্রত্যক্ষ জ্ঞানমূর্ত্তিতুল্য, সংশয় (সন্দেহ) শূন্য, আকাশের ন্যায় নির্মল, একমাত্র পরমেশ্বর সম্বন্ধীয় তত্ত্বই যাঁহার চিন্তার বিষয়, সত্ত্ব-রজ-তম গুণের অতীত, নির্ম্মল, সাক্ষিস্বরূপ, সমস্ত ভাবের অতীত, নিত্যস্থিতিশীল (স্থির নিশ্চল) একমাত্র সেই পরম ব্রহ্মতুল্য শ্রীশ্রীগুরুদেবকে নমস্কার করি।।

Capture

গুরুগীতা –

হে দেবি ! এই গুরুদেবই সংসারে সর্ব্বজীবের মঙ্গলবিধান করিয়া থাকেন, গুরুর কৃপায়ই জীব অত্যন্ত দুঃখ হইতে পরিত্রাণ পাইয়া আনন্দলাভ করিয়া থাকে গুরুদেবই আনন্দের প্রতিমূর্ত্তি, ইহা নিশ্চিত জানিবে এই-ই আমার বাক্য।।

Capture

গুরুগীতা –

সংসার সমুদ্রে একমাত্র ত্রাণকর্ত্তা পরব্রহ্মতুল্য শ্রীশ্রীগুরুদেবের উক্ত মাহাত্ম্যসকল শ্রবণ করিয়াও যে ব্যক্তি তাঁহাকে নিন্দা করে, হে মহাদেবি ! যতকাল চন্দ্র এবং সূর্য পৃথিবীতে কিরণ বিস্তার করিবেন, (প্রকাশ পাইবেন) ততকাল সেই ব্যক্তি ভয়ানক নরককুণ্ডে বাস করিয়া থাকে।।

Capture

গুরুগীতা –

গুরুদেবের কাছে কখনও মিথ্যা কথা বলিবে না । শিষ্য জ্ঞানী পণ্ডিত হইলেও গুরুদেবের সমক্ষে কোনরূপ অহঙ্কার বা গর্ব্ব করা উচিত নহে।।

Capture

গুরুগীতা –

যে ব্যক্তি হুঙ্কার – উচ্চঃস্বরে তর্জ্জন গর্জ্জন করিয়া গুরুদেবকে পরাস্ত করে, দেহান্তে সে জনশূন্য ভয়ানক জঙ্গলে ব্রহ্মরাক্ষস হইয়া থাকে।।

Capture

গুরুগীতা –

শ্রুতি-স্মৃতি প্রভৃতি শাস্ত্র না জানিয়াও ভক্তিতে যাহারা সকল সময় শুধু গুরুসেবা করেন, তাহারাই প্রকৃত সন্ন্যাসী বলিয়া কথিত হইয়াছে । শ্রুতি-বেদান্তাদি শাস্ত্র জানিয়াও যাহারা গুরুভক্তিহীন – গুরুকে ভজনা করেন না – তাহারা মাত্র বেশধারী নামে সন্ন্যাসী, প্রকৃত সন্ন্যাসী নহেন।।

Capture

গুরুগীতা –

নিত্যবর্ণ, সদানন্দময় নিরাকার (আকৃতি অবয়বশূন্য) গুণের (সত্ত্ব-রজঃ তমোগুণের ) অতীত নিজ আত্মায় অবস্থিত (পরমাত্মাচিন্তায় নিমগ্ন) শ্রেষ্ঠ হইতে শ্রেষ্ঠ, সর্ব্বদা আনন্দকারক, পরমাত্মায় সন্তুষ্ট আত্মারাম সেই পরমপুরুষকেই সর্ব্বদা চিন্তা করা কর্ত্তব্য।।

«Prev  1 / 2