দীক্ষা

 

দীক্ষার প্রয়োজন

দীক্ষা হল এক মহাশক্তি যা মানব জীবনকে সম্পূর্ণ রূপে পরিবর্তিত করতে পারে। দীক্ষা গ্রহণ করার অর্থ হল এক সামান্য মানব জীবন থেকে উত্তীর্ণ হয়ে দৈবী জীবনে প্রবেশ করা, ঈশ্বরীয় শক্তির সাথে জুড়ে যাওয়া, মহামানবীয় জীবন যাত্রার পথে এগিয়ে যাওয়া। মানব জীবনে গুরুর থেকে দীক্ষা প্রাপ্ত হওয়া এক অসামান্য ঘটনা। কেউ যদি তার জীবনকালে একবার গুরুদীক্ষা লাভ করে, তাহলে তার জীবন ধন্য হয়, ঈশ্বরীয় কৃপা তার জীবনে অনবরত প্রবাহিত হতে থাকে, দৈবীশক্তিগুলি মানুষ জীবনকে ধন্য করে তোলে অনবরত ছায়া সঙ্গী হয়ে থেকে। গুরুশক্তি পরাব্রহ্মাণ্ডীয় শক্তি। ব্রহ্মাণ্ডের পরাশক্তি গুরুশক্তিতে নিহিত থাকে। গুরুশক্তি যখন তার মহাশক্তির সাথে জুড়ে দীক্ষা রূপী মহামন্ত্র শিষ্যকে প্রদান করেন, তখন এটি বোঝা উচিৎ যে দীক্ষার সাথে সাথে গুরুরূপী মহাশক্তি এবং পরাব্রহ্মাণ্ডীয় শক্তি শিষ্যের শরীররূপী আধারে সমাহিত হয়, যে সে এক মহাশক্তিকে দীক্ষার রূপে আপন করে নিয়েছে, সে আর কোন সাধারণ ব্যক্তি নয়, সে ঐশ্বরিক শক্তিতে বদলে যায়, ঐশ্বরিক ভাব দ্বারা বদলে যায়, ঐশ্বরিক প্রেমে বদলে যায়। সে শিষ্য তখন দৈবী হয়ে যায়। সকল নঞর্থক শক্তি তাকে ছেড়ে চলে যায়। শিষ্যের শরীরে, মনে যতই নঞর্থক চিন্তা, ভাবনা, খারাপ প্রভাব ছিল, সেগুল আর থাকে না। পরাব্রহ্মাণ্ডীয় শক্তির সাথে জুড়ে গিয়ে সেই মানব শরীর সেই **। এ এক অকল্পনীয় সত্য। গুরু মহাকাশের মহাশক্তি, আর দীক্ষা রূপী মহামন্ত্র ‘অক্ষর’ শব্দ-ব্রহ্ম রূপে শিষ্যের শরীরের ভিতর গুরুর মাধ্যমে প্রবেশ করে শিষ্যকে এক দৈবী মানবজীবনে পরিবর্তিত করে দেয়। সারা জীবন চেষ্টা করেও, একটি মানুষের মধ্যে এত ক্ষমতা নেই যে সে নিজেকে পরাব্রহ্মাণ্ডীয় শক্তির রূপে বদলে ফেলবে। এ একমাত্র সম্ভব যদি সদ্‌গুরুর কৃপালাভ হয়, বা সদগুরুর অহৈতুকী কৃপা করলে। লক্ষ লক্ষ জন্মের পরে কেউ কেউ এমন কৃপা লাভ করতে পারে। ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যে কেবল ৫ শতাংশ মানুষ জগতে দীক্ষা লাভ করেছে, এবং বলা হয় এই মানুষগুলি, যারা দীক্ষা লাভ করেছে, তাদের কারণেই দেশে শান্তি রয়েছে, নয়তো সারা দেশ আসুরিক শক্তিতে ভরে যেত, পৃথিবী অনেক দিন আগেই ধ্বংস হয়ে যেত। এই হল দীক্ষার মাহাত্ম্য। দীক্ষা লাভ করার পরে মানবজীবনে শান্তি আসে, সে অপরাধিক কর্ম থেকে দূরে থাকে, সবার জন্য তার মনে প্রেম ভালোবাসা থাকে। সে তখন শান্তিময় পরিস্থিতিতে থাকা পছন্দ করে, নিজেও শান্তিতে থাকে, অন্যদেরও শান্তিতে থাকতে দেয়। এক মানবজীবনের ভাব যে এইরূপ বদলে যায়, এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। এইরকম ভাবে সদ্‌গুরু দীক্ষা দান করে মানবজীবনকে সম্পূর্ণ রূপে বদলে সারা দেশ এবং জাতীর মঙ্গল বিধান করে। এ হল দীক্ষার অসম্ভব শক্তি।

দীক্ষা পাওয়ার পর মানবজীবন আঁধার থেকে আলোর দুনিয়াতে প্রবেশ করে। মানুষ জন্ম নিয়ে জাগতিক দুঃখ কষ্টের মধ্যে এসে পড়ে, জগতের মায়া, মোহ, লোভ, হিংসা তাকে গ্রাস করে। প্রতি মুহূর্তে সে এল উদ্বিগ্ন জীবন যাপন করে। দুশ্চিন্তা দুর্ভাবনা তার জীবন সাথী হয়ে দাড়ায়। মন থেকে আনন্দ সম্পূর্ণ রূপে মুছে যায়। সে সবসময় অমানবিয় কাজ কর্ম, চিন্তা ভাবনায় ডুবে থাকে। দীক্ষা লাভের পরে এই সব নঞর্থক ভাব মন থেকে, চিন্তা থেকে দূরে সরে যায়। মন সম্পূর্ণ রূপে বদলে সদর্থক মন হয়ে ওঠে, এক সদর্থক মানবজীবনে বদলে যায়। মন ঈশ্বরমুখী, গুরুমুখী হওয়ার ফলে, জপ সাধনায় বেষ্টিত থাকার ফলে, সকল খারাপ চিন্তা ভাবনা তাকে ছেড়ে দূরে পালিয়ে যায়। মন শান্তিপূর্ণ হয়, চিত্ত আনন্দে ভরপুর হয়ে ওঠে। সব সময় মন চিত্ত এক ঈশ্বরীয় ভাবে মন্ত্র পরাব্রহ্মাণ্ডীয় শক্তিতে ভরপুর। এই শব্দরূপী মহাশক্তি সদগুরু শিষ্যদের প্রদান করেন মন্ত্রের রূপে। আর এই দীক্ষারূপী মহামন্ত্র শিষ্য নিজের জীবনে চর্চা করে নিজেই একদিন গুরে হয়ে ওঠে, এবং জগতের মঙ্গল করে, বহু মানুষকে এই ঈশ্বরীয় পথে নিয়ে আসে। এমন ভাবেই গুরুদীক্ষা পরম্পরায় সম্পূর্ণ জগতের মঙ্গল করে। ধন্য এই গুরু দীক্ষা পরম্পরা। ধন্য সদগুরু, ধন্য এই মানবজীবন। যে বস্তু দেবতাগণও পায়না, তা গুরুকৃপায় সাধারণ মানুষ পায়, এই পরাব্রহ্মাণ্ডীয় সংসারে এ এক চমৎকার।